শিক্ষাকতা তার কাছে শুধু পেশা নয়, এক ধরনের সাধনা। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে। পেশায় শিক্ষক, মননে লেখক এবং কাজে সমাজসেবক কিশোরী মোহন সরকার। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের মহিষাডাঙ্গা গ্রামে ১৯৫৭ সালে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষক অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গ্রাম্য পাঠশালায় শিক্ষাযাত্রা শুরু করে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বই ছিল তার নিত্যসঙ্গী। শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি অন্যদের শেখানোর তীব্র ইচ্ছাই তাকে টেনে নেয় শিক্ষাকতা পেশায়। শিক্ষক হিসেবে তিনি যেমন নিবেদিত, তেমনি একজন গর্বিত পিতা। তার তিন ছেলের মধ্যে ছোট জন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার সৌম্য সরকার। তার বড় ছেলে পলাশ সরকার বর্তমানে সচিবালয়ে কর্মরত। আর মেজো ভাই পুষ্পেন সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টস প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮৪ সালে আশাশুনি উপজেলার বদরতলা জেএসসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন কিশোরী মোহন সরকার। এরপর একাধারে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, সাতক্ষীরা হাই স্কুল, বাগেরহাট গার্লস স্কুল ও সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে তিনি জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে সাতক্ষীরায় যোগ দেন। পরে মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার ভি. জে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে সাতক্ষীরার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদ থেকে অবসরে যান কিশোরী মোহন সরকার।
কিশোরী মোহন সরকারের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই শিক্ষার প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসার প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক জাতির রূপকার।’ তার মতে, শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটানোই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
তার শত শত শিষ্য আজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত- কেউ সচিব, কেউ জেলা প্রশাসক, কেউ আবার বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। সাতক্ষীরার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খানও তার ছাত্র।
কিশোরী মোহন সরকার তার শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তার সন্তানদের নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তানদের কখনো পড়াশোনার জন্য চাপ দেইনি। তবে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতাম। সকালে উঠে পড়াশোনা, বিকেলে খেলাধুলা, রাতে আবার বই—এই রুটিন তাদের শৈশব থেকেই গড়ে দিয়েছিলাম। সৌম্যকে বিকেএসপিতে পাঠানোটা আমার জন্য ঝুঁকি ছিল। আমি আমার সন্তানদের শুধু পথ দেখিয়েছি, বাকি কাজটা ওরা নিজেই করেছে।